রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০১ অপরাহ্ন
মানুষের মূল্য এবং সর্বোচ্চ মূল্যায়ন বংশ পরিচয়ে নয়, তাঁর কর্মে। তাঁর জন্মগ্রহণ যেখানে বা যে বংশেই হোক কর্মের মানদণ্ডে সেই মানুষকে ‘শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা নীচুতা’ নির্ণীত করা হয়। জন্মগত সূত্রেই যেন এক একজন মানুষ তাঁর আসল পরিচয় নির্ণয় করতে চায়, বলতে চায় যে, তাঁর প্রকৃত পরিচয় নিজস্ব কর্ম-কান্ডেই যেন হওয়া উচিৎ। তাঁর মহৎ কার্যাবলির জন্যেই সকলের প্রসংশা অর্জন করতেই সক্ষম হবে।
যুগে যুগে এমন ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ বহু গুনীব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। তাঁরা সকলের কাছেই একজন মহৎ মানব বা ব্যক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। পৃথিবীতে যারা মহান, যারা স্মরণীয় এবং বরণীয় ব্যক্তি তাঁরা কখনো বংশ মর্যাদার বড়াই দেখিয়ে বড় হন নি। সেই পরিচয় বহু জনের হয়তোবা থাকতেও পারে। কিন্তু তাঁরা নিজস্ব কর্মগুনে সফল ব্যক্তি হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীর মানব হৃদয়ে তাঁরা নিজ আসন স্হায়ী করেছে। কিন্তু যদি তেমন যোগ্য ব্যক্তি আবার নারী হয় তো কথাগুলো একটু অমসৃণ পথ ধরে অগ্রসর হবে। নারীদের মান- মর্যাদা, আজকের সমাজের পুরুষরা একটু আলাদা আঙ্গিকে অর্থাৎ কটাক্ষের দৃষ্টিতেই দেখে।
এই জগৎ-সংসারে নারীদেরকে যুগে যুগেই সবচেয়ে আলোচিত বা কটূক্তিপূর্ণ একটি প্রাণী হিসেবেই গন্য করা হয়েছে। এই ধরণের কথা বলে ছিল ভার্জিনিয়া উলফে। তিনি নিজে কিংবা নারী সমাজদের জন্যেই একটি নিজস্ব কক্ষ চেয়েছিল, কিন্তু তা পাননি। সেই নারীর এমন ধারার আলোচনাতেই তাঁর পতিপক্ষের সবাই অংশ নিলেও শুধু মাত্র যার সম্পর্কেই অনেক গভীর আলোচনা, সে নারীকেই অংশ নেওয়ার জন্য বিশেষ কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।
বলতেই হচ্ছে, এ পতিপক্ষটির নাম পুরুষ, নিজের বানানো অলীক বিধাতার পার্থিব প্রতিনিধি, আর পুরুষমাত্রই অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি, আবার- কেউ কেউ তাঁর বিধাতার চেয়েও নাকি বহু প্রতিভা-দীপ্ত। এমনই কিছুসংখ্যক- অন্ধ ও বধির, দালাল কিংবা দার্শনিক, লম্পট এবং ঋষি, কবি ও কামুক, বালক এবং বৈজ্ঞানিক, পাপী কিংবা প্রেমিক পুরুষরা অংশ নিয়ে ছিল এমন নারী সম্পর্কে অন্তত একটি- “নেতিবাচক শ্লোক” রচনায়।
কিন্তু এ ধরনের ‘শ্লোক’ আসলেই অশ্লীল আবর্জনার মতো। এই প্রতিপক্ষ কিংবা পুরুষ জাতিরাই কখনো কারো মূল্য বা অধিকারকে কখনই স্বীকার করে না। এমন কি নারীদের অস্তিত্বই স্বীকার করে না অনেক সময়। তাই এমন পুরুষরা নারী সমাজ সম্পর্কে বেশ কয়েক হাজার বছর ধরেই যেগুলো অশোভন শ্লোক রচনা করেছে, তার অনেক বিধি বিধান সবটাই যেন সন্দেহজনক এবং আপত্তিকর। বলতেই হচ্ছে পুরুষ নারীকে দেখে দাসীরূপে, করেও রেখেছে দাসী; তবে স্বার্থে এবং ভয়েই কখনো সখনও মহিমাকীর্তন করে দেবী রূপে। এমন চতুর এই ‘পুরুষ’ নামধারী আজব প্রাণী, তারা নারীদের এমন নিন্দায় যত সামান্য সত্য বা সামাজিক ভাবে মূল্যায়ন করলেও পর্বতীতে যেন মহিমা কীর্তন ছেড়েই সু-পরিকল্পিত ভাবেই প্রতারণা করে। যুগে যুগেই পুরুষরা সাধারণত প্রতারণা ক’রে এসেছে নারী সমাজকে। সুুতরাং একটি কথা বলতে হয়, নারীরা কখনই কোনো- ‘দুর্বল মানুষ’ নয়। কেউ নারী হয়ে জন্মায় না। সমাজ একটি মানব শিশুকেই ধীরে ধীরে নারীতে পরিণত করে। শৈশবে তাদেরকে হাজারো নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হতেই হয় নারী। পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে নারীরা নিজেই নিজেকে- ‘অবলা’ ভাবতে শিখে। নারীর মন এবং মননের বিকাশের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নারীদেরকে “সু-শিক্ষায় শিক্ষিত’ হয়ে স্বাবলম্বী হতে হবে, তাদের কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকার মতো দুর্বিসহ বা অসহায় জীবন আর নেই।
সুতরাং এই নারীকে ভাঙতে হবে তার শৃঙ্খল। মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন কিংবা একটি সম্মান জনক জীবন নারী হয়েও অর্জন করতে হবে। তাই- “শেখ হাসিনা” অক্লান্ত পরিশ্রম করে যোগ্য ও সফল মানুষ হিসেবে নিজে যেমন বাঁচার অধিকার সৃষ্টি করেছে। সে ভাবে রাষ্ট্রের সকল নারীসমাজেরও নিশ্চিত করবার চেষ্টা করেছে। জানা দরকার তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় অথবা ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারতের বিশ্বভারতী ও ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় বা অস্ট্রেলিয়ার-ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বা ব্রাসেলসের বিশ্ব বিখ্যাত-ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাশিয়া’র- পিপলস ফ্রেন্ড-শিপ বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সহিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেন তাঁকেই সম্মান সূচক ‘ডক্টরেট ডিগ্রি’ প্রদান করেছে।
তাছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে ডিপ্লোমা প্রদান করেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা বা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্যেই বিশ্বের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি এবং পুরস্কার প্রদান করেছে। তিনি বলেন, নারীরা অর্জন করে সমাজকে দেখাতে শুরু করেছে। ঠিক তখনই সমাজের পরিবর্তন হবে, যখন সমাজের সর্বস্তরের মানুষরা নারীর প্রতি দৃষ্টি-ভঙ্গির পরিবর্তন করবে। এই পরিবর্তন আনতে হলে আবার নারীদেরও পরিশ্রমী হতে হবে। তাই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্যে প্রত্যেক নারী সমাজকে অবশ্যই ‘উন্নত জীবন চর্চার’ কর্মটি করতে হবে। বলতেই হয়, বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে আজ মাথা তুলে দাঁড়িছে-শুধুমাত্র নারীর কারণে।
এ দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় আত্ম সম্মান বোধ সম্পন্ন এক নারী জাতি তিনিই হচ্ছেন-বঙ্গবন্ধুর-তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী- ”শেখ হাসিনা”। তাঁর নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে বর্তমান এই বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করা। অক্লান্ত পরিশ্রম, দেশপ্রেম ও অপ্রমেয় দূরদৃষ্টি এক্ষেত্রে অনেক কাজ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে যে কেউই আর তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করতেই পারবে না। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যেই যেন- এক ‘আদর্শ’ হিসেবে পরিগণিত। এটিই প্রধানমন্ত্রী- শেখ হাসিনার খুব বড় অর্জন তা স্বীকার করে নিতে হবে। বলা দরকার যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রায় বঙ্গবন্ধুর স্ব পরিবার নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানিরা- ”রাষ্ট্র-ক্ষমতা” দখল করে। যার ফলেই বাংলাদেশ কয়েক- দশক পিছিয়ে পড়েই ছিল। আর সেই তখন থেকে চলেছে, কুচক্রীগোষ্ঠীদের আতাতে ‘ইতিহাস’ বিকৃতির এক অধ্যায়। এমন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা একা নিজেই, তাঁর নিজস্ব দল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, সংস্কৃতিকর্মী, ছাত্র-শিক্ষক -বুদ্ধিজীবী সমাজ, নারীসমাজ, বিশেষ করেই তরুণ সমাজের সহিত এই বাংলাদেশের আপামর সাধারণ মানুষের ভালবাসা নিয়ে সম্মিলিতভাবে ধাপেধাপেই তাকে বন্ধ করতে পেরেছে এবং আজো সেই চেষ্টাটি অব্যাহত রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র এই সর্বোচ্চ অর্জন সত্যিই জাতি গর্বিত। তথ্যপ্রযুক্তি যুগে তাঁর মাধ্যমে এদেশের মানুষ তা ব্যবহার করতে পারছে। শুধুুু প্রযুক্তির ব্যবহারই নয়, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি কিংবা অগ্রগতিতে বিশ্বাসী হয়েই যেন দরিদ্র্য বিমোচনে জাতি অর্থনৈতিক মুক্তির সুফল পেয়েছে।
১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসক গোষ্ঠির রোষানলেই পড়েছিল। তবুও গণতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, ধর্ম নিরপক্ষেতা কিংবা জাতীয়তাবাদকে নিয়েই আজও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁকেই বারবার কারান্তরীণ করা হয়ে ছিল। জেলেখানা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে না থেকে বা হত্যার জন্যেই কমপক্ষে-‘১৯ বার সশস্ত্র হামলা’র’ পরেও মনোবল বিন্দু মাত্র না কমিয়ে নিজ কর্মকান্ডে সংগ্রামী মনোভাব পোষণ করেই আজকে সফলতার কর্ণধার। রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে- শুধুই ব্যস্ত নন,- ভালো ‘রন্ধনশিল্পী’, ‘সঙ্গীত” প্রিয় এবং বই লেখা কিংবা পড়ার প্রতিও বহু আগ্রহ আছে। জানা দরকার, দেশনেত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়টি গ্রন্থেরও রচিয়তা। সাহিত্য অঙ্গনে সমাদৃত হওয়া সেইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুস্তক হচ্ছে: ‘’শেখ মুজিব আমার পিতা’’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘কিছু-ভাবনা’, ‘দারিদ্র্য বিমোচন’, ‘সাদা-কালো’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ওরা টোকাই কেন?, সবুজমাঠ পেরিয়ে, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র,আমার সংগ্রাম, আমার স্বপ্নসহ লিখেছে- ‘Miles to Go,The Quest for Vision2021(two volumes) শত বাধা-বিপত্তি বা হত্যার হুমকি সহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখহাসিনা ভাত-ভোট ও সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে অবিচল থেকেই ‘সংগ্রাম’ চালিয়ে গেছে এবং যুগোপযোগী এই বইগুলি লিখেছে। তাঁর সু-নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনসাধারণ অর্জন করেছে ‘বাক স্বাধীনতা’ এবং পেয়েছে ‘গণতন্ত্র’। ‘বাংলাদেশ’ পেয়েছে নিম্ন-মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশের মর্যাদা। প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনার’ অপরিসীম আত্ম ত্যাগের ফলেই ‘বাংলাদেশ’ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
অর্জন তাঁর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য নির্দিধায় বলতে পাবি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবাধিকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাকন উইমেন্স’ কলেজ ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল মর্যাদাসূচক “Pearl S. Buck ’৯৯’’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। তাছাড়া জাতিসংঘের- বিশ্ব খাদ্য কর্ম-সূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদান স্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক স্বীকৃতি- সেরেস (CERES) মেডেল প্রদান করেছে। শেখ হাসিনাকেই সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ ১৯৯৮ সালে ‘মাদার টেরেসা’ পদক প্রদান করেছে। আবার ১৯৯৮ সালে তিনাকে আন্তর্জাতিক রোটারি ফাউন্ডেশন যেন Paul Haris ফেলোশিপ প্রদান করেছে। পশ্চিম বঙ্গ সর্বভারতীয় কংগ্রেস, তাঁকেই ১৯৯৭ সালে- ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু’ স্মৃতি পদক প্রদান করেছে। তা ছাড়াও তাঁকেই আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক১৯৯৬-১৯৯৭ সালে Medal of Distinction পদক কিংবা ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে- “Head of State” পদক লাভ করেন। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরাগান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হতে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনে শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে। তিনি বৃটেনের “গ্লোবাল ডাইভারসিটি পুরস্কার” এবং ২ বার সাউথ সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। ২০১৪ সালে ইউনেসকো তাঁকে শান্তির বৃক্ষ ও ২০১৫ সালে উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরামে- নারীদের ক্ষমতায়নের জন্যেই তাঁকে রিজিওনাল লিডার শীপ পুরস্কার এবং “গ্লোবাল সাউথ-সাউথ ডেভলপমেন্ট এক্সপো”-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করেছে। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তির উন্নয়নেই বহু অবদানের জন্যে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় হতে নারীনেত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৫ সালে সম্মাননা সনদ প্রদান করেছিল।
শেখ হাসিনা বিগত ৩ দশকের রাজনীতির মাধ্যমেই, তিনি নিজেই আওয়ামী লীগ দলে, স্বাধীনতার পক্ষে বা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন-আদর্শে ও বাংলাদেশের অস্তিত্বে ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে যেন বহু অর্জন নিয়েই ইতিহাস হয়ে রয়েছে। শেখ হাসিনা- দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি কিংবা অর্থনৈতির চরম সফল, আমাদের ঘরের মেয়ে বলেই হয়তোবা আমরা খুব কাছ থেকে তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা কিংবা অবদান সবটুকু দেখতে পাই না। তাই, নিরপক্ষেতার আতশি কাঁচের নিচে ফেলে শেখ হাসিনা’র রাজনৈতিক অধ্যায়কেই ইতিহাসের পরম্পরায় বিচার করার সময় উপস্থিত। বিশেষত জাতীয় জীবনেই তিনি- অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ এক নির্বাচন- ২০১৮ সালের- ৩০ ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়েল পরই ০৭ জানুয়ারি- ২০১৯ সালে ৪র্থবারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই ‘’শপথ’’ নিয়ে বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে এই আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর – ১২ জানুয়ারি ৩য় বারেও “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর প্রধানমন্ত্রী” হিসেবে “শপথ” নিয়ে ছিল। আবার তিনি ১৯৯৬ সালে ২৩ জুন ১ম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছিল। তাঁর নেতৃত্বধীন বাংলাদেশের আওয়ামীলীগ সেই বছরের বারো জুনেই সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। জানা যায় যে ২০০১ সালে একটি সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ষড়যন্ত্রে’ শিকার হয়ে তাঁর দল আওয়ামীলীগ পরাজয় বরণ করলেও শেখ হাসিনা বিরোধীদলের শক্তিশালী নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। বলা দরকার তাহল ২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে জটিলতা সৃষ্টি করলেই “সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার” রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে। তাঁরা প্রায় ২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর সে সরকার- ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর- ‘৯ম জাতীয় সংসদ’ নির্বাচনের আয়োজন সৃষ্টি করে। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতায় জয়লাভ করে। শেখ হাসিনা- ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ২য় বারের মতই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল।
এবার ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা তিনটি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই বিরোধী দলীয় চৌকশ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। এমন এ নির্বাচনের পরেই বাংলাদেশ থেকেই ‘সামরিক আইন’ প্রত্যাহার করে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এই ‘নারী নেত্রী শেখ হাসিনা’ ৯০ এর জটিল এক ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেই ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকার পদত্যাগ করেছিল।
১৯৯১ সালে সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হয়ে ‘রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার’ পরিবর্তন এনেই ‘সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা’ পুনঃপ্রবর্তনে রাজনৈতিক দলসহ সকলকে সংগঠিত করেছিল। ১৯৯৬ সালের দিকে বিএনপি’র ভোটারবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধেও তিনি গণআন্দোলন গড়ে তোলেছিল। আন্দোলনের মুখে তিরিশমার্চ তৎকালীন খালেদা জিয়ার সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। চৌকশ মেধা সম্পন্ন না হলে এতো অর্জন কখনোই সম্ভব হতো না। আর বলতে পারি যে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সব সময়েই আপোষহীন। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়ে তাঁর আওয়ামীলীগ সরকার ১৯৭১সালে মানবতাবিরোধী এক সংঘটি অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল স্থাপনের জন্য নেত্রী শেখহাসিনা আইন প্রণয়ন করেছিল। এমন এআইনের আওতায় স্থাপিত ট্রাইবুনালে যেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিল এবং ‘রায় কার্যকর’ করেছে। সাহসী পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আদর্শ মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। তাই তো তাঁর এতোই সৃজনশীল মেধা ও সাহস। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামাঞ্চলে এমন মেয়ে ১৯৪৭ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
সামাজিক কর্মকান্ড, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেই অসামান্য অবদানের জন্যেই শেখ হাসিনাকে বিশ্বের “বিভিন্ন সংস্থা” সম্মানিত করেছে এবং আগামীতেও করবে তা আশা করাই যায়।
এ বাংলাদেশের আর্থ-সমাজিক কিংবা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে, উত্তরোত্তর রাজনৈতিক উন্নয়নকে যথাযথভাবেই পরিকল্পনা এবং নির্দেশনা নিয়ে ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা শুধুমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব। ইতিমধ্যে তিনি তাঁর গভীর আন্তরিকতা এবং নির্দেশনা রেখে চলেছে। সুতরাং,-জাতি হিসেবে, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে যদি সত্যি সত্যিই ‘অগ্রসর জাতি-রাষ্ট্র’ গুলির মাঝেই অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা থাকে তাহলে বাস্তবতা হচ্ছে, নারী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার শাসনামলেই আর্থ-সামাজিক খাতে এদেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। বলতেই হয় যে, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার উল্লেখ যোগ্য সাফল্যগুলি ছিল ভারতের সঙ্গে তিরিশ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ কিংবা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন। তা ছাড়াও, তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণ মূলক কর্মসূচি বা ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা মূলক কর্মসূচি চালু করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য তা হচ্ছে দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়হীনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।
তিনি একজন যোগ্যতাসম্পন্ন নারী মানুষ হিসেবে দীর্ঘ ২৫ বছর পার্বত্য চট্টগ্রামের যে গৃহযুদ্ধ চলছিল তার অবসান ঘটিয়ে ছিল। সেই ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তাঁকে ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো- ‘হুপে-বোয়ানি’ “শান্তি” পুরস্কারেও ভূষিত করেছে। প্রত্যন্ত গ্রাম ও শহরে গরিব-অসহায় মেয়েদের বাল্য বিবাহের শিকার হয়, আবার অনেক নারীরা যেন নেশাতে আসক্ত হয়়ে যাচ্ছে। সন্তানদের তো মানুষ করতেই হবে। এই সন্তানদেরকে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার ‘দোষ বা দ্বায়’ যদিও সরকারের নয়। তবুও আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবন্ধী নারীর সহিত সকল নারীসমাজের আত্মমর্যাদা, বাল্যবিবাহ ও ‘নেশায় আসক্ত’ থেকে পরিত্রাণের অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি এই দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ বা টেকসই উন্নয়নের জন্য অসামান্য অবদানে নারী নেত্রী শেখ হাসিনাকে লিডার শীপ ক্যাটাগরির আওতায় সর্বোচ্চ পুরস্কার -‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ- ২০১৫’ পুরস্কারেই ভূষিত করেছে। তাছাড়া, তাঁকে টেকসই ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়নে- International Telecommunication Union (ITU) আওতায় যেন ICTs in Sustainable Development Award 2015 প্রদান করেছে। তিনি বলেন, সমাজে এ নারীদের ব্যাপক অংশ আজো যে পশ্চাদপদ অবস্থায় পড়ে আছে তাতো পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণেই কিছুটা। এমন এই ‘অসম্ভব কাজ’ গুলোকেই সম্ভবনাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দিয়েছে নারী নেত্রী শেখ হাসিনা। সুতরাং এই নারী সমাজের গতানুগতিক ভাবেই শিক্ষকতায়, ডাক্তারি পেশায় ও মিডিয়া লাইনেও নারীর আধিপত্য বা তাদের দাপট রয়েছে। ঐতিহ্যগত ভাবেই কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির পাশাপাশি এমন এই বাংলাদেশ এখন শিল্প ভিত্তিক অর্থনীতিতেই গড়ে উঠছে। এ দেশীয় তৈরি পোশাক ও ব্যবহৃত বিভিন্ন ঔষধ শিল্পের সহিত তথ্য প্রযুক্তি খাতও বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এটিও শেখ হাসিনার সাফল্য। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদ কালে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুুুৎ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশিই প্রবৃদ্ধি অর্জন, পাঁচ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীত করণ, ভারত দেশ এবং মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রত্যেকটি ইউনিয়নেও ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে সাফল্য অর্জন করেছে, কৃষকদের জন্যও কৃষিকার্ড তাছাড়াও “দশ” টাকাতে ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্যেও সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৩৮.৪ থেকে তা ২০১৩-১৪ বছরে ২৪.৩ শতাংশে হ্রাস। তাইতো জাতিসংঘ কর্তৃক শেখ হাসিনার শান্তির মডেল গ্রহণ করতে পেরেছে।
শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছে। তিনি দেশে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই ‘সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি হয়ে ছিল। সে কলেজের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আবার পরের বছরেই সভাপতি হয়েছিল। আরও পরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একজন সদস্য ও ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হয়ে ছিল। ছাত্রজীবন থেকেই এই নারী শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। এইদেশের নারীরা রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক উন্নয়নে একেবারেই যেন অনেক পিছিয়ে ছিল।
সুতরাং, নারী সমাজের দিকে বর্তমান এই আওয়ামী লীগ সরকার চৌকশ সু দৃষ্টির জন্যেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং চাকরিতেও অনেকাংশে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। উন্নয়নের দেশ, এ বাংলাদেশ। নারীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্যে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের একটি রোলমডেল হিসেবে অবস্থান করছে। নারীসমাজকে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ, নারী হত্যা, নারী পাচার, নারী অপহরণ, নারী বৈষম্য ও নারীসমাজেকে বিভিন্নভাবেই যেন শোষণের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অন্যায় অবিচার থেকে ‘শেখ হাসিনা’ মুক্তি দিতে পেরেছে। এমন বহু অর্জনই তাঁর নিজস্ব অর্জন। বলতেই পারি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী- ড. এম ওয়াজেদ মিয়া ও আপন বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর পরিচয়ে নয়, তাঁর নিজস্ব পরিচয়েই স্বদেশ সহ সমগ্র বিশ্বে ইতিহাস হয়ে রবে।
লেখক: নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।
Leave a Reply